স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, "ফিলিস্তিন আমাদের চোখের সামনেই রক্তাক্ত হচ্ছে," এবং গাজা ও পশ্চিম তীরে যা ঘটছে তা উপেক্ষা করা বা চোখ ফেরানো যায় না। তিনি ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অনুষ্ঠিত ৩৪তম আরব শীর্ষ সম্মেলনে দেওয়া এক ভাষণে এ কথা বলেন।
বাগদাদে অনুষ্ঠিত ৩৪তম আরব লিগ সম্মেলনে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ফিলিস্তিনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “ফিলিস্তিন আমাদের চোখের সামনেই রক্তাক্ত হচ্ছে”। তিনি গাজা উপত্যকার পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করে অবিলম্বে এই সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান।শনিবার (১৭ মে) ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অনুষ্ঠিত ৩৪তম আরব লিগ সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, “ফিলিস্তিন আমাদের চোখের সামনে রক্তাক্ত হচ্ছে। গাজা ও পশ্চিম তীরে যা ঘটছে, তা উপেক্ষা করা যায় না।”
তিনি আরও জানান, স্পেন ও ফিলিস্তিন একসাথে জাতিসংঘে একটি নতুন প্রস্তাব পেশ করতে কাজ করছে, যার মাধ্যমে গাজার ওপর ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধ তুলে নেওয়ার দাবি জানানো হবে।
সানচেজ বলেন, “গাজায় যে পরিসংখ্যান উঠে এসেছে, তা ভয়াবহ ও অগ্রহণযোগ্য। এগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এই সহিংসতার চক্রকে থামাতেই হবে।”
তিনি গাজা সংকট সমাধানে চারটি অগ্রাধিকার বিষয়ে আলোকপাত করেন—
১. গাজায় মানবিক বিপর্যয় অবিলম্বে বন্ধ করা,
২. গণহত্যা থামাতে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করা,
৩. টেকসই রাজনৈতিক সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া,
৪. ইউরোপীয়, আরব ও ইসলামি বিশ্বের মধ্যে সংলাপ জোরদার করা।
সানচেজ বলেন, “শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য স্পেন যা কিছু সম্ভব, সব কিছু করতে বদ্ধপরিকর।”
তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থনে গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে, যাতে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। পাশাপাশি নিখোঁজ রয়েছে ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ।
এই সম্মেলনটি ‘সংলাপ, সংহতি ও উন্নয়ন’ স্লোগানে অনুষ্ঠিত হয়। এটি আরব লিগের চতুর্থ সম্মেলন যা ইরাক আয়োজিত করেছে।
সম্মেলনে অংশ নেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানি, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ সিসি, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মাহমুদসহ অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানরা।
জর্ডানের প্রধানমন্ত্রী জাফর হাসান, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম তাদের দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের পক্ষে সম্মেলনে অংশ নেন।
সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।
আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গত বৃহস্পতিবার সম্মেলনের এজেন্ডা অনুমোদন করেন, যেখানে ফিলিস্তিন ইস্যুসহ পাঁচটি প্রধান বিষয় ও পাঁচটি উদ্যোগ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল "সংলাপ, সংহতি ও উন্নয়ন," তবে গাজায় ইসরাইলের ২০ মাস ধরে চলা গণহত্যা, সিরিয়া, লেবানন ও সুদানের সংকটসহ অন্যান্য আঞ্চলিক ইস্যু আলোচনায় প্রাধান্য পায়।
Post a Comment