Top News

রাজনৈতিক চাপে ইসলামী আন্দোলন: প্রস্তুতি না থাকলে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা: পলাশ রহমান


 ইসলামী আন্দোলনের চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তুতি পলাশ রাহমান


সাম্প্রতি সময়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠেছে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে রাজনীতি করা দলটি- বর্তমান সময়ের মতো আলোচিত, সমালোচিত কখনো হয়নি। 


ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ এবং একইসঙ্গে বিএনপির সাথে রাজনৈতিক বিরোধে জড়িয়ে পড়া- ই আন্দোলনকে একটি আলোচিত রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেছে।


চাঁদাবাজি, খুন, রাহাজানিসহ বিএনপি'র বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর ব্যাপারে ই আন্দোলন সোচ্চার অবস্থান নিয়েছে। ফলে দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে। 


রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূল পর্যায়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠতে পারে, যদি তারা রাজনৈতিক ও আইনগত দিক থেকে সুসংগঠিত প্রস্তুতি গ্রহণ না করে।


জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে কিছু প্রচারণা শুরু করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- ইসলামীআন্দোলন আওয়ামীলীগ দোসর। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ, ইসলামী আন্দোলনের অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগ নেতার অংশগ্রহণ এবং ফ্যাসিবাদ আমলে বাধা মুক্ত রাজনৈতিক কর্মকান্ড করতে পারার ঘটনাগুলো সামনে এনে ই আন্দোলনকে 'আওয়ামীঘনিষ্ঠ' দল হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।


এই অভিযোগগুলো পুরোপুরি অসত্য হলেও ইসলামী আন্দোলন এগুলোর বিপরীতে কোনো গ্রহণযোগ্য, সহজবোধ্য বয়ান দাঁড় করাতে পারেনি। তারা এসব অভিযোগের রাজনৈতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তর না দিয়ে প্রতিপক্ষকে পাল্টা আঘাত করছে। ই আন্দোলনের এই কৌশল জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। 


প্রতিপক্ষের অভিযোগের বিরুদ্ধে ইসলামী আন্দোলনের শক্ত বয়ান থাকতে হবে। যুক্তিপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য বয়ান প্রস্তুত করে তৃণমূলে ছড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি প্রতিপক্ষের দোষ ত্রুটি সামনে আনা যেতে পারে সীমিতভাবে। মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র পাল্টা আক্রমণ করে জনগণের বিভ্রান্তি দূর করা যাবে না। 


ইসলামী আন্দোলনের নেতা সৈয়দ ফয়জুল করিমের অতীত বক্তব্যও নির্বাচনী রাজনীতিতে ইস্যু হয়ে উঠবে। জামায়াত বিরোধী অবস্থান, নারী নীতি সম্পর্কিত মতামত, আফগানিস্তান প্রসঙ্গসহ নানা বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালানো হতে পারে। সৌদি আরবে তার কারাবন্দিত্বের ঘটনাও বিতর্কিতভাবে উপস্থাপন করে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। এসব বিষয়ে দলীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা প্রস্তুত রাখা অত্যন্ত জরুরি।


ওয়াজ মাহফিল, মসজিদকেন্দ্রিক দাওয়াতি কার্যক্রম এবং মুজাহিদ কমিটির কার্যক্রমও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের চাপে পড়তে পারে। তৃণমূলে বিএনপি সমার্থক দ্বারা ই আন্দোলনের নেতাকর্মীরা শারীরিক ও মামলাসংক্রান্ত হয়রানিতে পড়তে পারে। সুতরাং এখন থেকেই সংগঠনের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের আইনি লড়াই, চিকিৎসা সহায়তা এবং সংঘর্ষ এড়িয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর কৌশল শেখানো প্রয়োজন।


বাংলাদেশের পীর-মাশায়েখ ও আলেম সমাজ সাধারণত জনগণের কাছে সম্মানিত হলেও- রাজনৈতিক প্লাটফর্মের চিত্র ভিন্ন হবে। ফলে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সহনশীলতা ও হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। অর্থাৎ মানসিক দৃঢ়তা ও রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা অর্জন অপরিহার্য। 


বিরোধীপক্ষ যতই উত্তেজক, অশ্লীল বা অপমানজনক আচরণ করুক, ইসলামী আন্দোলনকে তার নৈতিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হওয়া চলবে না। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে দলীয় শৃঙ্খলা ও আদর্শগত স্থিরতা ধরে রাখতে হবে।


রাজনৈতিকভাবে সফলতা ঘরে তুলতে হলে বাস্তবতা অনুযায়ী কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এখন আর পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। সামনে আগাতে না পারলে রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যেতে হবে। সুতরাং সংগঠনের গতি ধরে রাখতে হবে। অতীতের মতো হাপিয়ে গেলে চলবে না। অন্তত নির্বাচন পর্যন্ত দলের আমির অথবা নায়েবে আমির, যেকোনো একজন নিয়মিত ঢাকায় থাকতে হবে।


নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক চর্চা, আইনগত সচেতনতা এবং মানসিক দৃঢ়তা গড়ে তোলা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি। এখন থেকেই একটি সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো তৈরি করতে না পারলে আগামীতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের আঘাতে সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post